বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন

সাকিবের ব্যাপারে এবার কঠোর হবে বিসিবি!

রিপোর্টারের নাম / ২০ টাইম ভিউ
হালনাগাদ : বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০২৪

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) আর কতকাল সাকিব আল হাসানের মতো খেলোয়াড়কে কোনো সিরিজের আগে এভাবে একের পর এক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলার অনুমতি দেবে? কেন তার মত অতি কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ পারফরমারকে জাতীয় দলের জন্য আলাদা করে রেখে দেওয়া হয় না? বারবার তাকে ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে এনওসি দেওয়া হয় কেন?

সাকিবের মত হাই কোয়ালিটি আর ভাইটাল প্লেয়ার যত বেশি জাতীয় দলে মনোযোগী থাকবেন, বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন, ততই দলের লাভ। এতে করে সাকিব যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমে নিজের সেরাটা দিতে পারবেন। তার নিজের ও টিম পারফরম্যান্সের উন্নতি হবে। দলের সাফল্যও বাড়বে।

বিসিবি কি সে সত্য উপলব্ধিতে অক্ষম? নাকি সাকিবকে ঠিকমত নিয়ন্ত্রণ করায় সমস্যা? আজকাল অনেক সচেতন ক্রিকেট অনুরাগীর মনেই এসব প্রশ্ন উঁকি দেয়।

প্রায় প্রতি আসর বা সিরিজের আগে সাকিবকে জাতীয় দলে পেতে দেরি হয়। এবং শেষ পর্যন্ত তড়িঘড়ি করে তিনি সবার পরে অনুশীলনে যোগ দেন। নামমাত্র প্রস্তুতি নিয়ে জাতীয় দলের সঙ্গী হবেন, এটা আজকাল প্রায় নিয়মিত চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কী কারণে সাকিব প্রায় সিরিজ ও টুর্নামেন্টের আগে জাতীয় দলের বাইরে কোনো ব্যক্তিগত, পারিবারিক কর্মকাণ্ডে জড়ান? ছুটি কাটান কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর খেলে তারপর নামমাত্র প্রস্তুতি নিয়ে জাতীয় দলের সঙ্গী হন? বিসিবি কেন তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না? এসব প্রশ্নের কোনই সদুত্তর নেই।

জাতীয় দলের খেলা থাকলে ঠিক একই সময়ে আর কোনো আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলার অনুমতি দেওয়া হবে না, কেন বিসিবি এ সিদ্ধান্তটা পাকাপোক্তভাবে নিতে পারছে না? তা নিয়েও আছে ধুম্রজাল।

অবশেষে বিসিবি পরিচালক ও জাতীয় দল পরিচর্যা ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান জালাল ইউনুস দিয়েছেন এ প্রশ্নের জবাব। আজ সোমবার পড়ন্ত বিকেলে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে জালাল বলেন, ‘আসলে আমরা (বিসিবি) কোন পথে হাঁটবো, কী করবো বলুন!’

‘আমরা যদি কোনো ক্রিকেটারকে আইপিএল বা অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলার অনুমতি না দিয়ে জাতীয় দলের হয়ে খেলার কথা বলি, তখন চারিদিকে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। একটা ক্রিকেটার ভিনদেশে আরেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলে নিজের ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করুক, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করুক, তা আমরা কায়মনে চাই। তার নামডাক, সুনাম বৃদ্ধি পাক তাও চাই। সেই ক্রিকেটার অর্থনেতিকভাবে লাভবান হোক, সেদিকেও আমাদের দৃষ্টি থাকে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, সেই ক্রিকেটার জাতীয় দলের জন্য কতটা অপরিহার্য। সেটাও আমাদের মাথায় রাখতে হয়।’

জালাল যোগ করেন, ‘কোনো ক্রিকেটারকে অন্য দেশে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর খেলার অনুমতি প্রদানের আগে আমরা দুটি বিষয় মাথায় রাখি। প্রায় একই সময় ভিনদেশে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলতে দিলে তাকে জাতীয় দলে পাব না, কিংবা পেলেও সে শারীরিকভাবে দুর্বল-ক্লান্ত হয়ে যাবে, নিজের সেরাটা উপহার দিতে পারবে না; এরকম অবস্থা হলে আমরা সেই ক্রিকেটারকে অনুমতি দেই না।’

‘তাসকিন যেমন আইপিএল খেলার অনুমতি পায়নি। কারণ একটাই, তাসকিন ইনজুরিপ্রবণ। তাই বিশ্বকাপের আগে তাকে আইপিএল খেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাতে বিশ্বকাপে তার সেরা সার্ভিসটা পেয়েছে জাতীয় দল। কিন্তু মোস্তাফিজকে শেষ পর্যন্ত খেলার অনুমতি না দিয়ে কেন ফিরিয়ে আনা হয়েছিল, তা নিয়ে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল চারিদিকে। অথচ ভালমতো লক্ষ্য করুন, আইপিএল খেলে ক্লান্ত-অবসন্ন মোস্তাফিজ বিশ্বকাপে নিজের শতভাগ ও সেরাটা উপহার দিতে পারেনি। জায়গামত বল ফেলতে কষ্ট হয়েছে তার।’

জালালের পরিষ্কার কথা, ‘আমরা ভবিষ্যতে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট খেলার অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন ও কঠিন হয়ে যাব। দুটি বিষয় মাথায় রেখে তবেই কোনো বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে খেলার অনুমতি দেওয়া হবে।’

কী সেই দুটি বিষয়? জালালের ব্যাখ্যা, ‘প্রথম কথা, জাতীয় দলের অ্যাসাইনমেন্ট থাকলে কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়া চলবে না। এর বাইরে যদি আমরা জানি কোনো ক্রিকেটার ইনজুরি প্রবণ এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে অংশ নিলে তার ইনজুরি বাড়তে পারে, তাহলে তাকে বাইরের টুর্নামেন্ট খেলার অনুমতি দেওয়া হবে না।’

এমনটা অনেক ক্রিকেটারের বেলায় হয়। সাকিব কেন বারবার ছাড় পেয়ে যান? সে প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব না মিললেও ভেতরের খবর, এবার সাকিব ইস্যুতেও নড়েচড়ে বসবে বিসিবি। জানা গেছে, নির্বাচকদের পক্ষ থেকে সাকিব ইস্যুতে আরও কঠোর মনোভাব পোষণের দাবি উঠেছে। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু সাকিবের এরকম দায়সাড়া মনোভাব ও অপেশাদার মানসিকতায় বেজায় চটেছেন।

জানা গেছে, কানাডার গ্লোবার টুর্নামেন্ট খেলে দেশে আসার পর সাকিবের সঙ্গে খোলামেলা বসে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। বিসিবি পরিচালক ও জাতীয় দল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ক্রিকেট অপস চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস, প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে এবং অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত সাকিবের সঙ্গে বসে তার এবং জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্টের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা আলাপ করবেন।

একদম ভেতরের খবর, সেখানেই সাকিবকে একটা বড় বার্তা দেওয়া হবে। তাকে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হবে, আগামীতে আর স্বল্প প্রস্তুতিতে জাতীয় দলের সঙ্গী হওয়া যাবে না। নিয়ম ও প্রথা মেনে জাতীয় দলের সাথে থেকে অনুশীলন থেকে নিজেকে শতভাগ প্রস্তুত করে তবেই খেলতে হবে।

টিম ম্যানেজমেন্টের একটি বড় অংশ সেটাই চায়। এভাবে ভিন্ন ফরম্যাটে টানা কয়েক মাস খেলে কিংবা ছুটি কাটিয়ে এসে অল্প কয়েকদিনের প্রস্তুতি নিয়ে অন্য ফরম্যাটে বিদেশ সফর এবং জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ মিশনে চলে যাওয়া আর চলবে না। এমন কঠিন বার্তাও আসছে সাকিবের জন্য।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর